রিয়াল অধ্যায়ের অবসান লুকা মদরিচের

রিয়াল মাদ্রিদ থেকে লুকা মদরিচ বিদায় নিয়েছেন। ৫৯৭ ম্যাচ, ৪৩ গোল, ৯৫ অ্যাসিস্ট এবং রেকর্ড ২৮টি ট্রফি। রিয়াল মাদ্রিদের ইতিহাসে তিনিই এখন সবচেয়ে সফল খেলোয়াড়।

২০১২ সালের এক গ্রীষ্মের সন্ধ্যায়, টটেনহ্যাম থেকে স্প্যানিশ রাজধানীতে এসে পা রেখেছিলেন একজন নীরব, অনুচ্চারিত মিডফিল্ডার। অনেকে তখনই সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন—“এই শুকনো-ধরনের প্লে-মেকার কীভাবে রিয়ালের মতো দলে টিকবে?”১৩ বছর পর, প্রশ্নটা এখন ইতিহাস।

মদরিচের ঝুলিতে রয়েছে ছয়টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, চারটি লা লিগা, পাঁচটি ইউরোপিয়ান সুপার কাপ, ছয়টি ক্লাব বিশ্বকাপ। একটা খেলোয়াড়ের জন্য যা এক স্বপ্নের মতো। ২০১৮ সালে লিভারপুলকে হারিয়ে রিয়ালকে চ্যাম্পিয়ন করান, আর একই বছর ক্রোয়েশিয়াকে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ফাইনালে তোলেন। ফলাফল, মেসি-রোনালদোর যুগ ভেঙে ব্যালন ডি’অর নিজের করে নেওয়া।

মদরিচ কখনও সর্বোচ্চ গতির খেলোয়াড় ছিলেন না, ছিলেন না সবচেয়ে শক্তিশালীও। তবে বল পায়ে তাঁর শান্ততা, খেলার গতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা আর মাঝমাঠে কবির মতো উপস্থিতি তাঁকে আলাদা করে তুলেছিল। সতীর্থরা যখন ছুটে চলেছে, মদরিচ তখন ছিলেন মাঝমাঠের এক জাদুকর। তাঁর পাস, তাঁর মুভমেন্ট, তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি পুরো ম্যাচের ছন্দ বদলে দিত।

“তিনি ছিলেন দলের কম্পাস, যেখানে তিনি তাকাতেন, দল সেদিকেই এগোতো।” বলেছেন গুইলেম বালাগু।

তার শেষ ম্যাচটা মদরিচ চাননি এমন হোক। ক্লাব বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে পিএসজির কাছে ৪-০ গোলের হারের পর মাঠ ছাড়েন এক হতাশ মুখে। কিন্তু গৌরবের ভার এত বেশি যে শেষের হারের কোন মূল্য নেই। এই মৌসুমে বেশিরভাগ সময়ই বেঞ্চে কাটিয়েছেন। টকি়ং পয়েন্ট ছিল, আনচেলত্তি যখন তাঁকে ও টনি ক্রসকে জানান, ক্লাব এখন কৌশলগতভাবে এগোতে চায় আরও ফিজিক্যাল এবং ডাইনামিক মিডফিল্ড নিয়ে।

তবু মদরিচ থেকে গেছেন, শেখার মানসিকতা নিয়ে, নেতার ভূমিকা নিয়ে।এক উত্তরাধিকার, যা অমর।

রিয়াল প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের মতে, “মদরিচের নাম রিয়ালের ইতিহাসে স্বর্ণালী অক্ষরে লেখা থাকবে। তাঁর উত্তরাধিকার চিরকাল বেঁচে থাকবে।”

তিনি শুধু মাঠে পারফরমার ছিলেন না, ছিলেন ড্রেসিং রুমের আবেগ, তরুণদের জন্য আদর্শ। তাঁর বিদায় মানে শুধু একজন খেলোয়াড়ের যাত্রা শেষ নয়। এটি রিয়ালের এক ঐতিহাসিক যুগের পরিসমাপ্তি।

লুকা মদরিচ এখন যাচ্ছেন এসি মিলানে, হয়তো নতুন এক চ্যালেঞ্জ নিতে। তবে মাদ্রিদ, সেখানকার সাদা জার্সি আজীবন চির আপন থাকবে মদরিচের কাছে। বার্নাব্যুর গ্যালারি, মদরিচের নাম যেভাবে উচ্চারিত হবে তা কোনদিন মুছে যাবে না। যুগ বদলেছে। খেলাটা বদলেছে। কিন্তু ইতিহাসে থেকে যাবেন একজন যিনি পাস করতেন সুরের মতো, যিনি মাঠে হাঁটতেন এক কবির মতন।

Exit mobile version