হংকং ১-১ বাংলাদেশ
ঢাকার মাঠে শেষ মুহূর্তে হারের কষ্ট ভুলে হংকংয়ের কাই তাক স্পোর্টস পার্কে লড়াইয়ের এক দারুণ উদাহরণ গড়ল বাংলাদেশ। শক্তিশালী স্বাগতিকদের মাঠে পিছিয়ে পড়েও লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা শেষ পর্যন্ত লড়াই করে ১-১ গোলের ড্র নিয়ে ফিরেছে। ম্যাচে বাংলাদেশের উন্নতি চোখে পড়লেও ড্র করায় এশিয়ান কাপের মূলপর্বে বাংলাদেশের খেলার সম্ভাবনা অনেকটাই শেষ হয়ে গেলো।
পঞ্চাশ হাজার দর্শকে কানায় কানায় ভরা স্টেডিয়ামে শুরু থেকেই প্রতিকূল পরিবেশে খেলতে হয় বাংলাদেশকে। প্রথমার্ধে হংকং আধিপত্য দেখালেও দ্বিতীয়ার্ধে চিত্র পাল্টে যায় পুরোপুরি। কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা এ ম্যাচে একাদশে তিনটি পরিবর্তন আনেন—জায়ান আহমেদ, শমিত সোম ও তপু বর্মণকে রাখা হয় শুরু থেকেই। তবে অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া শুরুতে ছিলেন না একাদশে।
ম্যাচের শুরু থেকেই কিছুটা রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলে বাংলাদেশ। ২২ মিনিটে শমিত সোমকে ফাউল করে থামান হংকংয়ের এক ডিফেন্ডার, কিন্তু হামজার নেওয়া ফ্রি-কিক রক্ষণ দেয়ালে লেগে ফিরে আসে। এর পরেই ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত, ৩৩তম মিনিটে ডিফেন্ডার তারিক কাজী বক্সে ফার্নান্দো পেরেরাকে ফাউল করলে পেনাল্টি পায় স্বাগতিক দল। স্পট কিক থেকে অধিনায়ক ম্যাট অর নিখুঁত শটে গোল করে হংকংকে এগিয়ে নেন ১-০ ব্যবধানে।
প্রথমার্ধে বাংলাদেশের কিছু সুযোগ এসেছিল, কিন্তু গোলের দেখা মেলেনি। বিরতির পর ক্যাবরেরা নতুন ছক সাজান। ৬৩ মিনিটে জামাল ভূঁইয়া ও ফাহামিদুল ইসলাম মাঠে নামলে খেলার মোড় ঘুরতে থাকে। মিডফিল্ডে নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায় বাংলাদেশ। ৭৩ মিনিটে গোলের দারুণ সুযোগ এসেছিল সাদ উদ্দিনের ক্রস থেকে, কিন্তু ফাহামিদুল পোস্টের সামনেই ব্যর্থ হন বল জালে পাঠাতে।
তবে ৭৬ মিনিটে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। শমিত সোমকে ফাউল করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন হংকংয়ের অলিভার বেনজামিন। ১০ জনের দলে পরিণত হয় স্বাগতিকরা। সংখ্যাগত সুবিধা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের আক্রমণ আরও বাড়ে। অবশেষে ৮৪ মিনিটে গোলের দেখা মেলে। বাঁ প্রান্ত থেকে ফয়সাল ফাহিমের দারুণ ক্রসে বক্সে হেড করেন ফাহামিদুল, আর সেই বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিখুঁত প্লেসিংয়ে জালে জড়ান রাকিব হোসেন।
রাকিবের গোলের পর মাঠে উল্লাসের জোয়ার বয়ে যায়। সতীর্থদের সঙ্গে ডিজিটাল বোর্ডে বসে রাকিবের উদযাপন ছিল যেন ঢাকায় হারের আক্ষেপ মুছে দেওয়ার প্রতীক। শেষ দিকে আরও কয়েকটি আক্রমণ করলেও আর গোলের দেখা পায়নি কোনো দল। ফলে ম্যাচ শেষ হয় ১-১ সমতায়।
এই ড্রয়ের ফলে চার ম্যাচে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ালো ২ পয়েন্টে। হংকংয়ের পয়েন্ট ৮। গাণিতিক হিসেবে এখনও বাংলাদেশের আশা টিকে আছে এশিয়ান কাপে খেলার—তবে বাকি দুই ম্যাচে জয়ের বিকল্প নেই, পাশাপাশি তাকিয়ে থাকতে হবে অন্যদের ফলাফলের দিকে।
হংকংয়ের মাঠে এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে লড়াই করে একটি পয়েন্ট এনে দল দেখিয়েছে নতুন মানসিক দৃঢ়তা। ঢাকায় শেষ মিনিটের হারের পর এই ম্যাচে ড্র যেন প্রমাণ করল—বাংলাদেশ এখন হার মানতে শেখেনি।
