আরব্য রজনী জয় করা এক রাজপুত্র

সিন্দবাদ বা আলিবাবা পড়ে যায় মুশকিলে। অনেক বাধা বিপত্তি পেরিয়ে জয় করে নেয় বিজয় মুকুট। আরব সাগরের ঢেউয়ের গর্জনের সাথে ভেসে বেড়ায় আরব্য রজনীর সেই গল্পগুলো। যুগে যুগে আরব্য রজনী তুলে ধরে এই বীরদের। যারা কঠিন সংগ্রামে জয়ী হয়।

২০২২ এ এসে নতুন আরব্য রজনীর সাক্ষী হয়েছে সারা দুনিয়ার কোটি কোটি মানুষ। এবার নতুন সিন্দাবাদ সুদূর ল্যাটিন আমেরিকার এক বালক। বিস্ময় বালক! যার পদতলে লক্ষকোটি মানুষের চোখ। বিশ্ব আসরের শ্রেষ্ঠ সম্মান যার কাছে গিয়ে ধন্য হয়েছে। সেই সিন্দাবাদের নাম মেসি। লিওনেল মেসি। আরো ভালে করে বললে ফুটবল ঈশ্বরপুত্র মেসি। যাকে দিয়ে স্বয়ং ফুটবল ঈশ্বরের অপূর্ণতা মিটিয়েছে।

আজ সেই ১৮ ডিসেম্বর। যে রাতে একবিংশ শতাব্দির আরব্য রজনী উপহার দিয়েছিলো মেসি। আর্জেন্টিনা পেয়েছিলো বিশ্বকাপ। ৩৬ বছরের অপেক্ষা অবসানের রূপকথা। কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে লেখা হয়েছিলো এক নতুন রূপকথার গল্প।

সিন্দাবাদের বিপদে বিমোহিত দর্শক যে আতকে উঠতো; সে রাতে তেমনি ফ্রান্সের আক্রমণে আতকে উঠেছিলে কোটি দর্শক! পরক্ষণে আবার বিজয়োল্লাসে বাবার সঙ্গে কাঁদে খুদে ভক্ত। ওই চোখের পানিতে হয়তো মরুর বুকে আনন্দের শ্রাবণ ধারা বয়ে যায়। যার সতেজতায় কাতারের মরুভূমিতে সেদিন যেন সবুজ গাছ জন্মে। আর সে গাছে ফুল ফুটিয়েছিলো মেসি। যার সৌরভে মরুভূমিসহ পৃথিবীর সবাই যেন মেতে উঠে আনন্দের জোয়ারে।

অবাক চোখে সারা বিশ্বের ফুটবল ভক্তরা মেটায় না পাওয়া অপূর্ণতার স্বাদ। ট্রফিটা উঁচিয়ে ধরলেন মেসি; লেখা হলো নতুন গল্প। নতুন বীরপুরুষের বীরগাথা। একটাই নাম মেসি! মেসি! মেসি! রোজারিও শহরে সেদিন নিশ্চয়ই কোনো পাদ্রি গির্জায় বসে নীরবে ভাবছিলেন, এই শহর এই পৃথিবীকে দিয়েছে কতকিছু! এবারই সে পেলো আরাধ্য ট্রফি।

যদিও টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থেকে সৌদি আরবের কাছে হার দিয়ে শুরু হয়েছিলো লিওদের দল। যে দলে লিওনেল মেসি ও লিওনেল স্কালোনি আছে। সে দল সৌদি আরবের কাছে হেরে গেলো! এটা কি ফুটবল বিশ্বকাপ ইতিহাসের ট্র‍্যাজেডি! নাকি ইতিহাস! এমন অনেক বিশ্লেষণও করেছিলো ফুটবলবোদ্ধারা।

শেষ পর্যন্ত ইতিহাসই হলো। বলা চলে ইতিহাস পূর্ণতা পেলো। সৌদির কাছে হেরে যাওয়া দলটাই বিশ্বকাপ জিতলো। মেসির হাতে উঠলো ট্রফি। পূর্ণতা পেলো ট্রফি; অনন্য মর্যাদা পেলো আরবের এ বিশ্বকাপ।

Exit mobile version