এমিলিয়ানো মার্টিনেজ বাদ – আর্জেন্টিনা দলে চমক
২০২২ সালের বিশ্বকাপজয়ী দলের অপরিহার্য সদস্য ছিলেন তিনি। লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনাকে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বানাতে গোলপোস্টে একাই ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু এবারের নভেম্বরের আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে দেখা যাবে না সেই পরিচিত মুখ এমিলিয়ানো ‘দিবু’ মার্টিনেজকে।
আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যম টিওয়াইসি স্পোর্টসের খবর অনুযায়ী, আসন্ন ১৪ নভেম্বর অ্যাঙ্গোলার বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচের দলে রাখা হচ্ছে না মার্টিনেজকে। আর্জেন্টিনা ফুটবল ফেডারেশন (এএফএ) যদিও এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে স্কোয়াড ঘোষণা করেনি, তবে কোচ লিওনেল স্কালোনি নাকি নিজেই এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন তার প্রথম পছন্দের গোলরক্ষককে।
আর্জেন্টিনার বর্তমান কোচ লিওনেল স্কালোনি বিশ্বকাপজয়ী দলের সাফল্যের পেছনে অন্যতম স্থপতি। এবার তিনি দল গঠনে নিচ্ছেন ভিন্ন কৌশল। বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব শেষ হওয়ার পর, নভেম্বরের ফিফা উইন্ডোতে মাত্র একটি ম্যাচ খেলবে আর্জেন্টিনা— প্রতিপক্ষ আফ্রিকার দেশ অ্যাঙ্গোলা।
স্কালোনি চান, এই ম্যাচে তরুণ গোলরক্ষকদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ দিতে। তাই মার্টিনেজকে বিশ্রাম দেওয়ার এই সিদ্ধান্ত।
স্কালোনির ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানাচ্ছে, কোচ নিজেই মার্টিনেজকে জানিয়েছেন, যে এই সফরে তাকে দলে রাখা হবে না। আর্জেন্টিনা প্রথমে আলিকান্তেতে ক্যাম্প করবে, এরপর লুয়ান্ডায় অ্যাঙ্গোলার মুখোমুখি হবে। ফলে এই দুই পর্ব অর্থাৎ অনুশীলন ক্যাম্প এবং প্রীতি ম্যাচ- কোনোটিতেই থাকছেন না মার্টিনেজ।
বিকল্প গোলরক্ষকদের মধ্যে আছে প্রতিযোগিতা
মার্টিনেজের জায়গা পূরণ করা সহজ নয়- তবুও আর্জেন্টিনার বিকল্প গোলরক্ষকদের মধ্যে আছে প্রতিযোগিতা। সম্ভাব্য একাদশে থাকতে পারেন ওয়াল্টার বেনিতেজ, যিনি সম্প্রতি ডাচ ক্লাব পিএসভি থেকে ইংলিশ ক্লাব ক্রিস্টাল প্যালেসে যোগ দিয়েছেন। যদিও প্রিমিয়ার লিগে নিয়মিত নন, তবে লিগ কাপের ম্যাচগুলোতে নিজেকে প্রমাণের সুযোগ পেয়েছেন তিনি।
এছাড়া স্কোয়াডে আরও আছেন জেরোনিমো রুলি, যিনি এখন খেলছেন ফরাসি ক্লাব অলিম্পিক মার্সেইতে; এবং তরুণ গোলরক্ষক ফাকুন্দো কামবেসেস, যিনি সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে পুয়ের্তো রিকোর বিপক্ষে জাতীয় দলে অভিষেক করেছেন।
স্কালোনির এই সিদ্ধান্ত ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, তিনি ভবিষ্যতের জন্য একটি গভীর বেঞ্চ গঠনে মনোযোগী। কেবল বর্তমান নয়, ২০২৬ সালের বিশ্বকাপকে সামনে রেখে এখন থেকেই বিকল্প প্রস্তুত রাখা তার পরিকল্পনা।
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ এখন পর্যন্ত আর্জেন্টিনার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য গোলরক্ষক। কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে তার অনবদ্য পারফরম্যান্স আর্জেন্টিনাকে এনে দিয়েছে সাফল্য।
বিশ্বকাপজয়ী এই গোলরক্ষক এখনো কোচের প্রথম পছন্দ— কিন্তু স্কালোনির মতে, “দীর্ঘ মৌসুমে নিয়মিত খেলার পর মানসিক ও শারীরিক বিশ্রামও একজন ফুটবলারের জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ।”
তাই এই সিদ্ধান্ত কোনো শাস্তি নয়, বরং কৌশলগত পরিকল্পনারই অংশ। মার্টিনেজের জন্য এটি সাময়িক বিশ্রাম, যা তাকে আরও সতেজ হয়ে ২০২৬ সালের প্রস্তুতিতে ফিরতে সাহায্য করবে।
আর্জেন্টিনা তাদের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলবে
চলতি বছর আর্জেন্টিনা তাদের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলবে ১৪ নভেম্বর, অ্যাঙ্গোলার রাজধানী লুয়ান্ডায়। ম্যাচটি মূলত তরুণদের অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এএফএ’র এক কর্মকর্তা স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “স্কালোনি দলকে রোটেট করতে চান। মার্টিনেজ দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ, তবে তরুণরা যদি মাঠে সুযোগ পায়, সেটিও ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ। “
বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার চোখ এখন সামনে, ২০২৬ বিশ্বকাপ। মেসির অবসরের পরবর্তী যুগ কেমন হবে, সেই ভাবনা থেকেই শুরু হয়েছে নতুন পরিকল্পনা।
গোলপোস্টে মার্টিনেজ যেমন আস্থার নাম, তেমনি তার ছায়ায় নতুন প্রজন্মের গোলরক্ষকদের বড় হতে দেখা এখন সময়ের দাবি। স্কালোনির সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত হয়তো ঠিক সেই প্রস্তুতিরই অংশ।
মার্টিনেজের দল থেকে বাদ পড়া শিরোনাম হয়ে উঠলেও, বাস্তবে এটি এক ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত। স্কালোনির চোখ এখন ভবিষ্যতের আর্জেন্টিনা গড়ে তোলায়। আর সেই ভবিষ্যতের পরিকল্পনায় মার্টিনেজ আছেন— শুধু এবার বিশ্রামে, পরেরবার হয়তো আরও দৃঢ়ভাবে ফিরে আসার অপেক্ষায়।
