কেনো এত বিতর্কের পরেও পগবাকে নিয়ে বাজি ধরেছে মোনাকো?

যখন পল পগবার ওপর চার বছরের ডোপিং নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে, তখন প্রশ্নটা ছিল ‘কবে’ নয়, ‘আবার আদৌ দেখা যাবে কি না’। কিন্তু অক্টোবর মাসে আপিলের পর সেই নিষেধাজ্ঞা কমে ১৮ মাসে নামলে ‘কবে’ প্রশ্নটা আবার সামনে আসে। এরপর সবাই জানতে চায়—’কোথায় খেলবেন পগবা

শেষ পর্যন্ত জুনের শেষে, মোনাকোতে দু’বছরের চুক্তিতে সই করেন পল পগবা। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরের পর আর মাঠে নামেননি এই ফরাসি মিডফিল্ডার। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, জাপান এবং ফ্রান্সের কিছু ক্লাবের সঙ্গে নাম জড়ালেও শেষ পর্যন্ত ৩২ বছর বয়সী পগবাকে ফিরিয়ে আনে এএস মোনাকো।

জুভেন্টাসের সঙ্গে চুক্তি বাতিল হওয়ায় বিনা ট্রান্সফার ফিতে পাওয়া গিয়েছিল পগবাকে। মোনাকো সে সুযোগ নিতে ভুল করেনি মোটেও। যদিও ক্লাবের সিইও থিয়াগো স্কুরো বাস্তবতা মনে করিয়ে দেন, “ফ্রি এজেন্টদেরও বেতন থাকে।”

বর্তমানে আর্থিক সংকটে থাকা ফরাসি ফুটবলে বাজারের সুযোগ নিয়ে খেলোয়াড় আনাটা নতুন কিছু নয়। তবে পগবার ক্ষেত্রে বিষয়টা প্রতীকীও। তরুণ প্রজন্মকে তুলে আনার পরিকল্পনায় থাকা মোনাকো সাম্প্রতিক সময়ে অনেক অভিজ্ঞ খেলোয়াড় ছেড়ে দিয়েছিল, যেমন উইসাম বেন ইয়েদার ও গুইলারমো মারিপান।

কিন্তু জানুয়ারিতে সিইও স্কুরো বুঝতে পারেন, দলটি হয়তো একটু বেশি তরুণ-নির্ভর হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাদের এখন ভালো পারফরম্যান্স দিতে পারে এমন খেলোয়াড় দরকার।”

ইংলিশ মিডফিল্ডার জর্ডান হেন্ডারসনকে নেওয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হলেও, লিবিয়ান মিডফিল্ডার মুয়াতাসেম আল-মুসরাতিকে ধারে আনে মোনাকো, যদিও কিনে নেয়নি।

পগবা ক্লাব পরিদর্শনে যান মে মাসে, দেখা করেন কোচ অ্যাডি হুটার ও ক্লাব প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি রিবোলভলেভের সঙ্গে। এরপরই আসে চুক্তির ঘোষণা। তার সঙ্গে আরও একজন অভিজ্ঞ খেলোয়াড় হিসেবে দলে যোগ দেন এরিক ডায়ার, যিনি আসেন বায়ার্ন মিউনিখ থেকে বিনা ফিতে।

স্কুরো বলেন, “আমরা তরুণভিত্তিক কৌশল বজায় রাখতে চাই, তবে সেটার ভারসাম্য আনতে চাই। পুরোপুরি সরে যেতে চাই না।”

দলের মধ্যে পগবার প্রভাব ইতিমধ্যে স্পষ্ট—তিনি তরুণ ও অভিজ্ঞদের মধ্যে সেতুবন্ধ তৈরি করেছেন প্রি-সিজন ক্যাম্পেইনেই। যদিও শরীরিকভাবে এখনও পুরোপুরি প্রস্তুত নন, ক্লাবও তাড়াহুড়া করছে না।

পগবা নিজেই জানিয়েছিলেন, তার ইচ্ছা ছিল মৌসুমের প্রথম ম্যাচে তার শৈশবের ক্লাব লা হাভরের বিপক্ষে খেলা। তবে স্কুরো সে সম্ভাবনা নাকচ করে বলেন, “আমি নিশ্চিত করতে পারি, লা হাভরের বিপক্ষে তাকে মাঠে দেখা যাবে না। আমরা বাস্তববাদী। আমাদের তিন মাস সময় ধরে কাজ করতে হবে।”

এর মানে অক্টোবরের শুরুতে ফিরতে পারেন পগবা—প্রায় দুই বছর পর পেশাদার ফুটবলে।

পগবার আগমন ক্লাবের মার্কেটিংয়েও ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তাকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া কনটেন্ট ৪০০ মিলিয়নেরও বেশি ইমপ্রেশন পেয়েছে, আর উপস্থাপনার সময় অর্ধেকের বেশি জার্সি বিক্রি হয়েছে তার নামসহ।

লিগের প্রেসিডেন্ট ভিনসেন্ট লাব্রুনে বলেন, “তাঁর প্রতিভা, ব্যক্তিত্ব ও আন্তর্জাতিক অবস্থান লিগ ওয়ানকেও উপকৃত করবে।”

ক্লাবে চুক্তি সইয়ের সময় কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন তিনি।

“আমার মানসিক অবস্থা ভালো থাকলে মাঠেও ভালো হবে,” বলেন তিনি। “এতদিন পর সই করার সময় চোখে পানি চলে এসেছিল। এটা আমার জন্য আনন্দের মুহূর্ত ছিল।”

পগবার লক্ষ্য শুধু ক্লাব নয়, আবারও ফ্রান্স জাতীয় দলে ফেরা। ২০১৮ সালের বিশ্বজয়ী দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন তিনি। কোচ দিদিয়ের দেশঁর বাড়ি মোনাকোর পারফরম্যান্স সেন্টার থেকে খুব দূরেও নয়।

দেশঁর এর অধীনে ২০২৬ বিশ্বকাপ হবে তার শেষ টুর্নামেন্ট। পগবা চান সেই দলে ফিরতে, এবং আবারও জাতীয় দলের হয়ে ইতিহাস গড়তে।

তিনি বলেন, “আমি চাই আমার সন্তানরা আমাকে মাঠে খেলতে দেখুক। আমার স্বপ্ন, তারা আমার কোনো এক গোল উদযাপন করুক ‘ড্যাব’ দিয়ে!”

Exit mobile version