কয়েকদিন আগে পৃথিবীর মায়া ছেড়েছেন ব্রাজিলের বিশ্বকাপ জয়ী তারকা মারিও জাগালো। এবার চলে গেলেন আর এক বিশ্বকাপ জয়ী তারকা পশ্চিম জার্মানির ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার। সর্বকালের সেরা ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিত বেকেনবাওয়ার ৭ জানুয়ারি রোববার ৭৮ বছর বয়সে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন। এক বিবৃতিতে বেকেনবাওয়ারের পরিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
মৃত্যুর সময় পরিবারের সদস্যরা তার পাশেই ছিল। শান্তিপূর্ণভাবে বেকেনবাওয়ারে শেষকৃত্যানুষ্ঠান সম্পন্ন করার জন্য সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।’
ফুটবল বিশ্বে যে তিনজন একই সঙ্গে খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জয় করেছেন বেকেনবাওয়ার তাদের একজন। ব্রাজিলের মারিও জাগালোর পর পশ্চিম জার্মানির হয়ে বেকেনবাওয়ার এবং তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে সর্বশেষ এই কৃতিত্ব দেখান ফ্রান্সের দিদিয়ের দেশ্যাম।
বায়ার্ন মিউনিখে জম্ম নেওয়া বেকেনবাওয়ার জার্মানির ফুটবল অঙ্গনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলেন। খেলোয়াড় হিসেবে যেমন বিশ্বকাপ জয় করেছেন তেমনি কোচ হিসেবেও। বায়ার্ন মিউনিখে তার নেতৃত্ব এবং পারফরম্যান্সের পাশাপাশি জাতীয় দলে তার অবদানের কারণে তাকে ‘কাইজার’ বা সম্রাট উপাধি দেওয়া হয়েছিল। পেলের কাছ থেকে পেয়েছিলেন অনন্য এক সম্মান। পেলে তার উদ্দেশে বলেছিলেন, আমার দেখে সেরা খেলোয়াড়দের একজন বেকেনবাওয়ার।
১৯৭২ ও ১৯৭৬ সালে ব্যালন ডি অর জয় করেছিলেন বেকেনবাওয়ার। ২০০০ সালে জার্মানির শতাব্দির সেরা খেলোয়াড়ের খেতাব পান তিনি। আর ২০০৪ সালে জয় করেন ফিফা সেন্টিনিয়াল প্লেয়ার অ্যান্ড ফুটবল পার্সোনালিটি অ্যাওয়ার্ড।
১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৭৭ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জাতীয় দলে খেলেছেন বেকেনবাওয়ার। এ সময়ে তার খেলা ম্যাচের সংখ্যা ১০৩টি। তিনি ছিলেন জার্মানির সোনালি প্রজম্মের নেতা। তার নেতৃত্বে জার্মানি ১৯৭২ সালে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ এবং ১৯৭৪ সালে বিশ্বকাপ জয় করে।
ক্লাব পর্যায়ে বেকেনবাওয়ার তিনবার ইউরোপিয়ান কাপ, একবার ইউরোপিয়ান কাপ উইনার্স কাপ, পাঁচবার বুন্দেসলিগা, চারবার জার্মান কাপ জয় করেছেন। তার মৃত্যুতে বায়ার্ন মিউনিখ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বায়ার্নের বিশ্ব আর নেই। হঠাৎ করে বায়ার্ন অন্ধকারে ঢেকে গিয়েছে, শান্ত হয়ে গিয়েছে, একই সঙ্গে অনাথ হয়েছে। ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ারকে হারিয়ে জার্মানির রেকর্ড চ্যাম্পিয়ন শোকে আচ্ছন্ন। বার্য়ান আজ যে পর্যােয়ে পৌঁছেছে তাকে ছাড়া তা সম্ভব হতো না।’
বায়ার্নের অনারারি প্রেসিডেন্ট এবং ক্লাব ও জাতীয় দলে বেকেনবাওয়ারের সতীর্থ উলি হোয়েনেস বলেছেন, ফ্রেঞ্জ বেকেনবাওয়ার বায়ার্নের অন্যতম এক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। খেলোয়াড়, কোচ, প্রেসিডেন্ট এবং ব্যক্তি হিসেবে তাকে কখনো ভোলা যাবে না। তার সমকক্ষ কেউ কখনো হতে পারবে না।
বায়ার্ন মিউনিখে খেলার পর ১৯৭৭ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক কসমস ক্লাবে যোগ দিয়েছিলেন। জয় করেন নর্থ আমেরিকান সকার লিগের তিনটি শিরোপা। সেখানে তিনি পেলের সতীর্থ ছিলেন। ১৯৮০ সালে বেকেনবাওয়ার আবার জার্মানিতে ফিরে আসেন। যোগ দেন হামবুর্গে। এ ক্লাবটির হয়ে ক্যারিয়ারের শেষ ট্রফি জয় করেন। ১৯৮৩ সালে ৩৮ বছর বয়সে তিনি পেশাদার ফুটবলকে বিদায় জানিয়েছিলেন।
অবসরের পরের বছরই তিনি কোচ হিসেবে কাজ শুরু করেন। তার প্রশিক্ষণাধীনে জার্মানি দুইবার বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলে। ১৯৯০ সালের ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জয় করে জার্মানি।