বিশ্ব ক্লাব ফুটবলে আধিপত্য বিস্তার করছে লুইস এনরিকের প্যারিস সেন্ট জার্মেই (পিএসজি)। রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে ৪-০ গোলের জয়ে ফাইনালে উঠেছে ফরাসি জায়ান্টরা।
মাত্র সাড়ে পাঁচ সপ্তাহ আগে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে ইন্টার মিলানকে ৫-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল পিএসজি। এরপর থেকে যেন তাদের থামানোই যাচ্ছে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আয়োজিত ক্লাব বিশ্বকাপে একের পর এক দানবীয় পারফরম্যান্সে প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে লুইস এনরিকের দল।
বিপক্ষ যেন পেরে উঠছে না পিএসজির গতি, পাস আর প্রেসিংয়ের সঙ্গে। ব্রাজিলিয়ান ক্লাব বোটাফোগোর বিপক্ষে সামান্য হোঁচট খাওয়া ছাড়া পিএসজির পারফরম্যান্স ছিল নিখুঁত। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ এবং রিয়াল মাদ্রিদকে ৪-০ ব্যবধানে হারানোর পাশাপাশি নয়জনের দলে খেলেও বায়ার্ন মিউনিখকে ২-০ গোলে হারিয়েছে তারা।
রিয়ালের বিপক্ষে সেমিফাইনালে মাত্র ২৪ মিনিটেই ৩-০ গোলে এগিয়ে যায় পিএসজি। স্প্যানিশ মিডফিল্ডার ফাবিয়ান রুইজের জোড়া গোল এবং উসমান ডেম্বেলের নিখুঁত ফিনিশিংয়ে রিয়াল ব্যাকফুটে চলে যায়। শেষদিকে গনসালো রামোসের গোল নিশ্চিত করে আরও একটি বড় জয়।
“লুইস এনরিকে এক দানব তৈরি করেছেন,”—বলেছেন ডাজন বিশ্লেষক অ্যান্ড্রোস টাউনসেন্ড। আর সাবেক রিয়াল ফরোয়ার্ড গ্যারেথ বেল বলেন, “তারা এমন এক দল হয়ে উঠেছে, যারা দীর্ঘদিন রাজত্ব করবে। তারা তরুণ, ক্ষুধার্ত এবং প্রতিপক্ষকে লজ্জা দিতে চায়।”
এক বছরের ব্যবধানে বদলে গেছে পিএসজির চেহারা। ইগো নির্ভর পুরনো পিএসজির ছায়া নেই আজকের দলে। বরং দলীয় কৌশল, ছন্দ ও সামঞ্জস্যে যেন ফুটবল বিশ্বের আদর্শ হয়ে উঠছে তারা।চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোতে মেসির ইন্টার মায়ামি এবং সেমিতে এমবাপ্পের রিয়াল। দুই পুরনো পিএসজি তারকাই যেন এনরিকে যুগের শিকারে পরিণত হয়েছেন।
এমবাপ্পের বিদায়ের পর নতুন আক্রমণভাগ গড়ে তুলেছেন এনরিকে। ডেম্বেলে, ডেজাইরে দোয়ি, কভিচা কভারাসখেলিয়া আর মাঝে মাঝে ব্র্যাডলি বারকোলা মিলে তৈরি করেছে এক ভয়ংকর ফ্রন্টলাইন। মাঝমাঠে জোয়াও নেভেস, ভিতিনহা এবং রুইজ—তাদের বল নিয়ন্ত্রণ এবং ছন্দই যেন ম্যাচ নিয়ন্ত্রণ করে।
৫ ম্যাচে ১৮ গোল, এক ম্যাচ দূরে আরেকটি শিরোপা। সাম্প্রতিক পাঁচটি নকআউট ম্যাচে প্রতিপক্ষকে মোট ১৮-০ গোলে হারিয়েছে পিএসজি। ফরাসি কাপ, লিগ ওয়ান এবং চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের পর এবার ক্লাব বিশ্বকাপ জেতার খুব কাছাকাছি তারা। যদি তারা রোববার চেলসির বিপক্ষে জিতে যায়, তবে ২০২৫ সালের চতুর্থ শিরোপা হবে সেটি। সঙ্গে ট্রফি ‘দে শ্যাম্পিয়ন’ও মিলিয়ে হতে পারে পাঁচটির এক পূর্ণতা।
তবে একটাই প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে। এই দানবীয় ফর্ম কতদিন টিকবে? ২০২৪-২৫ মৌসুমে ইতোমধ্যে ৬৪টি ম্যাচ খেলেছে পিএসজি। চ্যাম্পিয়নস লিগ জয় করার এক মাস পরেই ২০২৫-২৬ মৌসুমে টটেনহ্যামের বিপক্ষে সুপার কাপ দিয়ে নতুন মৌসুম শুরু করবে তারা। তবুও, বর্তমান ফুটবল বিশ্বে পিএসজিই এখন মানদণ্ড। আর লুইস এনরিকে? তিনিই হয়তো এখন বিশ্বের সেরা কোচদের একজন।
