মোটা অঙ্কের ক্ষতিপূরণ চান এমবাপ্পে!

এমবাপ্পে

বর্তমানে ফুটবলবিশ্বের আলোচনায় সবথেকে জনপ্রিয় নামগুলোর একটি কিলিয়ান এমবাপ্পে। এমবাপ্পের সাথে তার সাবেক ক্লাব প্যারিস সেন্ট জার্মেইনের তীব্র আইনি লড়াই বেশকিছুদিন ধরেই চলছে। বহুদিন ধরে দুই পক্ষের সম্পর্ক টানাপোড়েনে থাকলেও এবার তা পৌঁছে গেছে এক নজিরবিহীন পর্যায়ে। উভয়পক্ষই একে অন্যের কাছে দাবি করছে ব্যাপক অঙ্কের ক্ষতিপূরণ, আর সেই অঙ্ক এতটাই বড় যে এটি ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম জটিল ও ব্যয়বহুল আইনি মামলায় রূপ নিয়েছে।

এমবাপ্পে দাবি করছেন, তাঁর চুক্তিকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল। তাঁর যে যুক্তি, সেই চুক্তি সাময়িক নয়, বরং স্থায়ী হিসেবেই গণ্য হওয়ার কথা। এই ব্যাখ্যা ধরে তিনি এখন যে পরিমাণ অর্থ দাবি করছেন, তা পুরো ফুটবল দুনিয়ায় আলোড়ন তুলেছে ২৬০ মিলিয়ন ইউরো, যা মার্কিন মুদ্রায় প্রায় ৩০১ মিলিয়ন ডলার এবং বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩ হাজার ৭২০ কোটি টাকা (১ ডলার = ১২৪ টাকা)। এই দাবির মধ্যে রয়েছে দীর্ঘদিনের বকেয়া বেতন, বিভিন্ন বোনাস, ক্ষতিপূরণ, অনুচিতভাবে বরখাস্ত হওয়ার অভিযোগ থেকে সৃষ্ট ক্ষতি, এমনকি মানসিক নিপীড়নের অভিযোগও। এর আগেও তিনি ৫৫ মিলিয়ন ইউরো বকেয়া টাকার দাবি জানিয়েছিলেন, যা এখনকার তুলনায় অনেক কম ছিল।

অন্যদিকে ফরাসি জায়ান্ট পিএসজি এমবাপ্পের বিরুদ্ধে তুলেছে আরও বড় অঙ্কের পাল্টা দাবি। তাদের হিসাব অনুযায়ী, ক্লাবটির আর্থিক ও ভাবমূর্তিগত ক্ষতি মিলে দাঁড়িয়েছে ৪৪০ মিলিয়ন ইউরো (প্রায় ৫১০ মিলিয়ন ডলার)। বাংলাদেশি টাকায় এর পরিমাণ প্রায় ৬ হাজার ২৪০ কোটি। পিএসজির যুক্তি , এমবাপ্পে হঠাৎ করে ফ্রি ট্রান্সফারে চলে যাওয়ায় তারা সম্ভাব্য ট্রান্সফারের বিশাল অর্থ হারিয়েছে। বিশেষ করে আল হিলালের দেওয়া ৩০০ মিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব তিনি প্রত্যাখ্যান করায় সেই সম্ভাবনা নষ্ট হয়। এছাড়া চুক্তিভঙ্গ, অসৎ আচরণ এবং ক্লাবের ব্র্যান্ড ক্ষতিগ্রস্ত করার অভিযোগও তুলে ধরেছে পিএসজি।

ক্লাবের অভিযোগ আরও গভীর। তাদের দাবি, এমবাপ্পে প্রায় ১১ মাস ধরে নিজের সিদ্ধান্ত গোপন করেছিলেন, যে তিনি চুক্তি নবায়ন করবেন না। এতে ক্লাব কোনও সফল বিকল্প পরিকল্পনা করতে পারেনি। এমনকি ২০২৩ সালের শেষদিকে করা বেতন কমানোর চুক্তিও পরে নাকি এমবাপ্পে অস্বীকার করেন।

অন্যদিকে এমবাপ্পের আইনজীবীরা সব অভিযোগ সরাসরি উড়িয়ে দিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, এমবাপ্পে কেবলমাত্র তাঁর আইনানুগ অধিকার প্রয়োগ করছেন। একজন পেশাদার কর্মীর মতো যা পাওয়ার কথা, তিনি সেটাই চাইছেন। পিএসজির কথিত ‘লফটিং’ প্রথা। অর্থাৎ মূল দল থেকে আলাদা করে রাখা। তাদের মতে নৈতিকভাবে শাস্তিমূলক এবং মানসিক চাপ তৈরির মতো আচরণ।

এই উত্তেজনা শুরু হয় ২০২৩-২৪ মৌসুমের আগেই। চুক্তি নবায়নে রাজি না হওয়ায় এমবাপ্পেকে প্রাক-মৌসুমের প্রস্তুতি ক্যাম্প থেকে বাদ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে আলোচনা হলে তিনি স্কোয়াডে ফিরলেও দুই পক্ষের সম্পর্ক আর আগের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেনি। অবশেষে ২০২৪ সালের গ্রীষ্মে তিনি ফ্রি এজেন্ট হিসেবে পিএসজি ছাড়েন এবং যোগ দেন রিয়াল মাদ্রিদে। ক্লাবটির হয়ে সাত বছরে ২৫৬ গোল করেও তাঁর বিদায় ছিল নাটকীয়, তিক্ত এবং বিতর্কে ভরা।

এখন এই দীর্ঘ টানাপোড়েনের পরিণতি নির্ধারণ করবে ফরাসি আদালত। সেখানে চলছে দুই পক্ষের লড়াই, আর ফুটবল দুনিয়া তাকিয়ে আছে চূড়ান্ত রায়ের দিকে। সম্ভাবনা রয়েছে, আগামী মাসেই এই বহুল আলোচিত মামলার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে।

Exit mobile version