বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন ও নারী ফুটবলের প্রধান মাহফুজা আক্তার কিরন কে বাফুফে হতে পদত্যাগের এক দফা দাবি উত্থাপন করেছে বাংলাদেশ ফুটবল সাপোর্টার্স ফোরাম। বিষয়টি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহাদাত হোসেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়-
পৃথিবীতে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হচ্ছে ফুটবল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ও বাংলাদেশের ফুটবলাদের অবদান চির স্মরণীয়, স্বাধীনবাংলা ফুটবল দল হচ্ছে তার উদাহরন। বাংলাদেশে ফুটবলের জনপ্রিয়তা সম্পর্কে আমরা সকলেই জানি। একটা সময় বিকাল ৫ টায় স্টেডিয়ামে খেলার সময় নির্ধারিত থাকলে দর্শকরা সকাল ১০ টার সময় গিয়ে লাইন ধরে বসে থাকতো স্টেডিয়ামে প্রবেশের জন্য। মোটামুটি ৯০’র দশকেও আমাদের দেশের ঘরোয়া ফুটবলের খেলায় স্টেডিয়ামে দর্শকের অভাব হতো না। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় ফুটবল তার আগের জৌলুসপূর্ন অবস্থানে নেই। খোদ বাফুফের দায়িত্বশীল লোকেরাও সেটা স্বীকার করলেও নিজেদের ব্যর্থতার কথা তারা সব সময় এড়িয়ে যায়। যাই হোক, দেশের ফুটবল নিয়ে যারা চিন্তা-ভাবনা করেন তারা সকলেই এক বাক্যে স্বীকার করেন দেশের ফুটবলের আজকের অবস্থার জন্য বর্তমান বাফুফের সভাপতি কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন এর নেতৃত্বাধীন কমিটি কোন ভাবেই যোগ্যতার প্রমান দিতে পারেননি। বাংলাদেশের সকল নাগরিকের প্রাণের দাবি বাংলাদেশের ফুটবল তার আগের অবস্থানে ফিরে যাক। এজন্য অবশ্যই বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে যথাযথ সংস্কার প্রয়োজন এবং স্বচ্ছ ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে একটি সাংগঠনিকভাবে দক্ষ লোকদেরকে বাফুফের দায়িত্বে আসা উচিত বলে সচেতন মহল মনে করেন।
বাফুফে সভাপতি কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন এবং তার যাবতীয় অনিয়ম ও দূর্নীতির অন্যতম দোসর মাহফুজা আক্তার কিরন কে অবিলম্বে বাফুফে হতে পদত্যাগ করার জন্য বাংলাদেশ ফুটবল সাপোর্টার্স ফোরাম এর পক্ষ হতে ১ দফা দাবি জানাচ্ছি। ঠিক কি কি কারনে আমরা তাদেরকে পদত্যাগ করার দাবি জানাচ্ছি তার ছোট্র কিছু পয়েন্ট আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।
১। বাফুফে নির্বাচনের জন্য কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন রাজনৈতিক ও সরকারী প্রশাসনিক যন্ত্র ব্যবহার করে বিগত সকল নির্বাচনে তিনি জয়লাভ হয়েছেন। বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা’র নিয়ম অনুযায়ী কোন দেশের ফুটবল ফেডারেশন বা মেম্বার এসোসিয়েশনের কার্যক্রমে রাজনৈতিক ও সরকারী হস্তক্ষেপ বরদাশত করা হয় না, সেরকম কিছু ঘটলে ফিফা সংশ্লিষ্ট দেশকে ফিফা হতে নিষিদ্ধ করা হয়। যার ঘটনা বাংলাদেশে একবার ঘটেছিলো কিন্তু অতীব আর্শ্চযের বিষয় বিগত নির্বাচন গুলোতে খোদ বাফুফের নির্বাচনে কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন রাজনৈতিক ও সরকারী প্রশাসনিক যন্ত্র ব্যবহার করেছে সভাপতি হয়েছেন সেটার ব্যাপারে ফিফা সম্পূর্ন নিশ্চুপ! আমরা চাই আগামীতে বাফুফে নির্বাচনে কেউ যাতে কোন ভাবে রাজনৈতিক ও সরকারী প্রশাসনিক যন্ত্র ব্যবহার করার সুযোগ না পায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
২। বিভিন্ন সময় পত্র-পত্রিকা এবং মিডিয়াতে বাফুফের কার্যক্রমের বিপক্ষে যে সকল অনিয়ম ও দূর্নীতির রিপোর্ট হয়েছে সেগুলো আমলে নিয়ে দ্রুত একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করা হোক এবং দোষীদেরকে শাস্তির আওতায় আনা হোক।
৩। ফিফা, এএফসি এবং দেশী-বিদেশী স্পন্সরদের হতে প্রাপ্ত ফান্ড তছরুপ করা হয়েছে বলে বিভিন্ন মহল হতে জানা গেছে এবং পত্র-পত্রিকা এবং মিডিয়াতে এসব নিয়ে রিপোর্ট হওয়া সত্ত্বেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
৪। বাফুফের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ কান্ডের পর ফিফা’র তদন্তের পর বাফুফের তদন্তে যেসকল অনিয়ম ও দূর্নীতির প্রমান পেয়েছিলো সে আলোকে যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়ায় সকলের মাঝে সন্দেহ তৈরি হয়েছে আসলেই কি কাউকে ছাড় দিয়ে সুযোগ দেয়া হচ্ছে? দোষীদের শাস্তি চাই।
৫। বিদেশী কোচ নিয়োগে বানিজ্য হয়, কমিশন বানিজ্য হয়। বিদেশী কোচেরা দেশের ট্যাক্স ফাঁকি দেন, এতে বাফুফের সায় আছে। বার বার এগুলোর সুযোগ দেয়া হয়েছে।
৬। ফিফা’র তদন্তের পর আবারও লোক দেখানো তদন্ত করতে হবে কেন? বাফুফে কি ফিফা’র চেয়ে বড় হয়ে গেলো?
৭। বাফুফের কার্যনির্বাহী কমিটিতে বাফুফে সভাপতি’র একক ক্ষমতা কমাতে হবে।
৮। অবিলম্বে বাফুফে ভবনের ৪র্থ তলায় অবস্থিত আয়নাঘর খ্যাত বা আবাসিক হোটেল খ্যাত মহিলা ক্যাম্প বন্ধ করে ভালো, উন্মুক্ত এবং সুন্দর পরিবেশে স্থানান্তর করতে হবে।
৯। বাফুফেতে অবৈধ ভাবে নিয়োগ বন্ধ করতে হবে, সৎ যোগ্য এবং দক্ষ কর্মী নিয়োগ করতে হবে।
১০। বাফুফের দূর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা ইমরান হোসেন তুষার, জাবের বিন তাহের আনসারী, হাসান মাহমুদ, মোজাম্মেল মিঠু, তানভীর আহমেদ ও মাহবুব আলম পলোকে অবিলম্বে চাকরিচ্যুত করতে হবে এবং তাদের দূর্নীতির তদন্ত করে ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে হবে।
আমাদের এই দাবি সমূহ মানার জন্য বাফুফে ৭ দিনের সময় দেয়া হলো। আগামী ৭ দিনের মধ্যে উক্ত বিষয় গুলোর সুরাহা না হলে এবং আমাদের দাবি মানা না হলে আমরা দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করবো।