হামজা চৌধুরীর বাংলাদেশের হয়ে খেলতে আর কোনও সমস্যা নেই জানিয়ে ছাড়পত্র দিয়েছে ফিফা। আগামী বছরের মার্চে তাকে জাতীয় দলে খেলানো নিয়ে পরিকল্পনা হচ্ছে। দেশের ফুটবলের বর্তমান ও ভবিষ্যৎসহ নানান দিক নিয়ে বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল আজ সকালে তার গুলশানের বাসায় সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন।
হামজা চৌধুরিসহ আরও অনেকের বিষয়ে বাফুফে সভাপতি বলেন, ‘আশা করছি হামজা চৌধুরীর মতো অন্য প্রবাসী যারা খেলছেন, তাদের আরও চিহ্নিত করে বাংলাদেশ দলে খেলার জন্য অনুপ্রাণিত করতে পারবো। এ ছাড়া বাফুফে চেষ্টা করবে খেলোয়াড়দের নিয়ে নানান তথ্য দিতে।’
তিনি আরও বলেন ‘আমরা সাবেক অধিনায়কদের সঙ্গে কথা বলেছি। রানিং খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের কাছ থেকে জোরালোভাবে সাড়া পাচ্ছি। তারাও চাইছেন ভালো খেলোয়াড়দের সঙ্গে খেলতে। যেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শক্তিশালী দল গঠন করে ভালো ফুটবল খেলা যায়, সাফল্য পাওয়া যায়। শুধু তারাই দেশের হয়ে খেলবেন তা নয়, লোকাল খেলোয়াড়রাও বিদেশিদের (হামজা) মাধ্যমে বাইরে খেলার সুযোগ পাবেন। এটাও হতে পারে।’
প্রবাসীদের নিয়ে গড়া বাংলাদেশ দল নিয়ে তাবিথ আউয়াল বলেন, এই বিদেশ ফেরত দলে হামজা একা নয়। আগে এসেছে জামাল ভূঁইয়া, সে পথ ধরে এসেছেন তারিক কাজী। হামজার সঙ্গে বাফুফের দেড় বছর ধরে কথা চলছে বলে জানান বাফুফে সভাপতি। তবে হামজার সাথে সরাসরি কথা হয়নি এখনো, তবে সামনের দিকে সম্ভাবনা আছে বলে জানান তাবিথ আউয়াল।
হামজাকে পেয়ে খুশি কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে বাফুফে সভাপতি বলেন, ‘আমরা অবশ্যই খুশি। হামজার মতো খেলোয়াড় কিংবা সামনে যারা খেলবেন দেশে, তারা খেলার মান বাড়াবেন। আপাতত ব্র্যান্ড ভ্যালু নিয়ে চিন্তা করছি না। উইনিং স্পিরিট নিয়ে ভাবছি। কম গোলে হারের চিন্তা থেকে জেতার মানসিকতায় যেতে চাই। খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে হবে। সবাইকে নিয়ে ব্র্যান্ডভ্যালু তৈরি করতে হবে। এই যেমন নারী দলের স্পন্সর নিয়ে কাজ চলছে। শিগগিরই তা আপনাদের জানাতে পারবো।’
বিদেশে খেলা বাংলাদেশি প্লেয়ারদের দেশের হয়ে খেলার জন্য অনুপ্রেরণা জোগাবে বলে আশাবাদী তিনি। এই নিয়ে তিনি বলেন, ‘দল অনেক শক্তিশালী হবে। বিশেষকরে রক্ষণ আরও বেশি গোছালো হবে, পাশাপাশি দলের আক্রমণভাগও আরও শক্তিশালী হবে। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশে অনেক মেধাবী ফুটবলার আছে। এদের সাথে প্রবাসী ফুটবলাররা যুক্ত হলে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ হবে অন্যতম শক্তিশালী দল। দেশের বাইরে, ইতালিয়ান, জার্মানি কিংবা দক্ষিণ আমেরিকান যারাই আছেন– আমি বিশ্বাস করি হামজা তাদের অনুপ্রেরণা জোগাবেন বাংলাদেশের জার্সি গায়ে খেলার জন্য।’
আসন্ন এএফসি এশিয়ান কাপ নিয়ে প্ল্যানিং চলছে। এশিয়ান কাপের বাছাই পর্ব থেকে একটি দল যাবে গ্রুপ সেরা হয়ে। ভারতের বিপক্ষেও আছে ম্যাচ। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটি অনেক গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। সেই ম্যাচে হামজা চৌধুরিকে খেলানোর সম্ভাবনা কিছুটা আছে বলে ধারনা করা হচ্ছে কিন্তু নিশ্চিত নয়।
২৫ জানুয়ারি প্রিমিয়ার লিগ শেষ হবে। তারপর চার সপ্তাহ জাতীয় দলের ক্যাম্প শুরু হবে। এরই মধ্যে কার সঙ্গে খেলা হবে, কবে হবে, কবে ভারতে যাওয়া হবে– তা আরও একটু সময় নিয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তাবিথ আউয়াল।
ঘরোয়া ফুটবলের মাঠ নিয়ে জিজ্ঞেস করাতে তিনি বলেন, ‘আমাদের বর্তমানে অতিরিক্ত তিনটা স্টেডিয়াম আছে। স্বীকার করতে হচ্ছে, সেগুলো বাংলাদেশের শীর্ষ পর্যায়ের খেলোয়াড়দের জন্য উপযুক্ত নয়। দুর্ভাগ্যবশত লিগ শুরুর দুএকদিন আগে মাঠ পেয়েছি। নিয়মিত ক্রীড়া পরিষদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। আমি আমার হতাশা ক্রীড়া পরিষদের সঙ্গে ভাগাভাগি করেছি। এভাবে মাঠ দিয়ে আবার একদিনের জন্য ফেরত নিতে চাইছে।
তিনি আরো বলেন ‘মাঠ সংস্কার কিংবা ঠিক রাখা বাফুফের দায়িত্ব। আমরা শুধু মাঠ নয়, সমর্থকদের জন্যও চিন্তিত। যেন দর্শকরা মাঠে গিয়ে ভালো পরিবেশ পান। বাথরুম, গ্যালারি, ফ্লাডলাইটসহ সব যেন ঠিক থাকে। একবার বরাদ্দ দিয়ে যেন নিয়ে না নেওয়া হয়। দীর্ঘমেয়াদে মাঠ পাওয়া যায়। চট্টগ্রামের মাঠটির আশায় আছি শিগগিরই পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন।
সবশেষে দর্শকদের ধন্যবাদ দেন তাবিথ আউয়াল। দর্শকরা মাঠে এসে খেলা দেখে প্লেয়ারদের সমর্থন ও ফুটবলের উন্নয়নে অবদান রাখছে এবং সামনের দিনগুলোতে পাশে থাকবে বলে তার বিশ্বাস।