বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের দল নির্বাচনে বিতর্ক যেন নিয়মিত চিত্রে পরিণত হয়েছে। এএইচএফ কাপে রাসেল মাহমুদ জিমিকে ফিটনেস টেস্টে না ডাকায় যেমন সমালোচনার ঝড় ওঠেছিল, এবার এশিয়া কাপের দল নিয়েও নতুন করে তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিশেষ করে সিনিয়র খেলোয়াড় পুষ্কর ক্ষিসা মিমোর বাদ পড়া এবং তা ঘিরে কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাদানুবাদ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে।
মাত্র তিন মাস আগে এএইচএফ কাপে দলের অধিনায়ক ছিলেন মিমো। অথচ এবার তাকে চূড়ান্ত দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি মেনে নিতে না পেরে তিনি অভিযোগের সুরেই বলেছেন, “ইন্দোনেশিয়ায় খাবার ও আরো কিছু বিষয়ে আমি ও নাইম সিনিয়র খেলোয়াড় হিসেবে সেখানে ম্যানেজার ও কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলতাম। আমাদের (নাইম ও মিমো) বাদ দিয়ে সেটার অনেকটা আক্রোশ মেটানো হয়েছে।”
এমনকি ফেডারেশনের কর্মকর্তাদের আচরণ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। মিমোর ভাষায়, “আমি ও নাইম সেক্রেটারির রুমে গিয়েছিলাম। সেখানে ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক নাইমকে বাজে গালি দেন। সেও একজন সাবেক খেলোয়াড়, তার কাছে এমন আচরণ আমরা প্রত্যাশা করি না। তাছাড়া এত দিন জাতীয় দলে খেলে এটা আমাদের প্রাপ্য না।”
এই বিতর্ক প্রসঙ্গে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক লে. কর্ণেল রিয়াজুল হাসান অবশ্য পরিস্থিতিকে হালকাভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন, “আসলে এটাকে আমি বাদানুবাদ বলব না। মতানৈক্য হয়েছিল। যারা বাদ পড়েছিল তারা তাদের বক্তব্য পেশ করছিল, আবার উনিও মতামত দিয়েছেন। সেখানে কিছুটা উচ্চস্বর হয়েছে। তবে পরবর্তীতে দুই পক্ষের মধ্যেই একটা স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করেছে।”
মিমো ছাড়াও নাইম, আবেদ ও মইনুল ইসলাম কৌশিক এবার দলে নেই। নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও সাধারণ সম্পাদক দাবি করেন, “বাদ পড়াটা নেতিবাচক শব্দ। আমার দৃষ্টিতে তারা ফাইনাল দলে আসতে পারেননি। পরবর্তী কোনো টুর্নামেন্টে হয়তো আসবেন। আমাদের এখানে দল নির্বাচন সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা, কোনো প্রকার পক্ষপাত নেই।”
এশিয়া কাপে বাংলাদেশ দলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন সাবেক অধিনায়ক মশিউর রহমান বিপ্লব। খেলোয়াড় বাদ পড়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ফিটনেসে অন্য খেলোয়াড়রা তাদের চেয়ে এগিয়ে ছিল। যারা যোগ্য ও ফিট তাদেরকেই নেয়া হয়েছে।” তার মতে, দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থাকলেও ফিটনেসের ঘাটতি থাকলে সেই খেলোয়াড়দের জায়গা হয় না।
এদিকে নতুন করে অধিনায়কের আর্মব্যান্ড উঠছে রেজাউল করিম বাবুর হাতে। দায়িত্ব পেয়ে তিনি জানান, “বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেয়া সব সময় আনন্দের। আমাদের এখানে হারানোর কিছু নেই, পাওয়ার রয়েছে। খুব স্বল্প সময়ের ক্যাম্প, আমরা চেষ্টা করেছি নিজেদের যতটুকু সম্ভব প্রস্তুত করার।”
বাংলাদেশ হকিতে খেলোয়াড়-কোচ, খেলোয়াড়-কর্মকর্তা কিংবা কোচ-কর্মকর্তার মধ্যে দ্বন্দ্ব নতুন নয়। কোচ বিপ্লবও সেটি স্বীকার করেছেন। তার ভাষায়, “আসলে দুঃখজনক হলেও সত্য বাংলাদেশের হকিতে এমন সংস্কৃতি ৩০ বছর। এশিয়া কাপে আশা করি সবাই সবার জায়গা থেকে আন্তরিকতা ও সহযোগিতা প্রত্যাশা করবে।”
ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন কাওসার আলী। তিনি জানালেন, “ভারতে আমরা যে হোটেলে থাকব সেখানে আগেই খাবার নিয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এই দলের কোচও আমার ছাত্র, অনেক খেলোয়াড়ও আমার শৃঙ্খলা সম্পর্কে ধারণা রাখে।”
১৯৮২ সাল থেকে বাংলাদেশ এশিয়া কাপে নিয়মিত অংশ নিচ্ছে। তবে এবারের টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ এসেছে পাকিস্তানের না খেলার কারণে। লক্ষ্য প্রসঙ্গে সাধারণ সম্পাদক বলেন, “আমাদের লক্ষ্য টুর্নামেন্ট পঞ্চম হয়ে যেন বিশ্বকাপ বাছাই খেলতে পারি। কারণ ষষ্ঠ হলে পাকিস্তানে সঙ্গে তিন ম্যাচ প্লে অফ খেলতে হবে। আট দলের মধ্যে ৫ম হওয়ার চেষ্টা করব আমরা।”
২৬ আগস্ট সকালে ভারত যাবে বাংলাদেশ দল। কলকাতা হয়ে সড়কপথে রাজগীরে পৌঁছাবে তারা। চূড়ান্ত ১৮ জনের সঙ্গে স্ট্যান্ডবাই সাজুও থাকবেন। ঘোষিত দলে রয়েছেন বিপ্লব কুজুর, নুরুজ্জামান নয়ন, হুজাইফা হোসেন, অধিনায়ক রেজাউল করিম বাবু, সোহানুর রহমান, ফরহাদ আহমেদসহ মোট ১৯ জন।
এশিয়া কাপ হকি শুরুর আগেই দল নির্বাচন ও বাদানুবাদের বিতর্ক বাংলাদেশের প্রস্তুতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তবে মাঠে পারফরম্যান্স দিয়েই এই সমালোচনার জবাব দিতে চান খেলোয়াড়রা।
স্কোর কার্ড
বিশ্বকাপ ২০২৩




















