প্রায় সাত বছর পর ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রাম ও তাদের নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী অনুশীলন ক্যাম্পর আয়োজন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সুইমিং ফেডারেশন। তবে এবারের আয়োজনের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে সম্ভাবনাময় ও সুবিধাবঞ্চিত সাঁতারুদের খুঁজে বের করা।
দু’টি বয়স শ্রেণীতে সারা দেশ থেকে বাছাইকৃত খেলোয়াড়দের নিয়ে ঢাকায় আয়োজন করা হবে দুই বছরের দীর্ঘমেয়াদী ক্যাম্প। চূড়ান্ত এই সময় ক্ষুদে সাঁতারুদের থাকা-খাওয়ার পাশাপাশি পড়ালেখারও দায়ীত্ব নিবে বাংলাদেশ সুইমিং ফেডারেশন। ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রামে ফেডারেশনের সহযোগী হিসেবে এগিয়ে এসেছে প্রাইম ব্যাংক।
আগামী ১০ মে মিরপুর সুইমিং কমপ্লেক্সে এই কর্মসূচীর উদ্বোধন করা হবে। মূলত দেশের ৮টি বিভাগের ৬৪টি জেলা থেকে আসা সাঁতারুদের নিয়ে ১৫টি ভেন্যুতে বাছাই কার্যক্রম চলবে।
বাছাই প্রক্রিয়া চলবে তিন ধাপে। সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শাহীন জানিয়েছেন, সারাদেশ থেকে প্রায় ৬০০ সাঁতারু বাছাই করা হবে। পরবর্তীতে ঢাকায় দ্বিতীয় পর্বের বাছাইয়ে ৬০০ সাঁতারু থেকে কমিয়ে আনা হবে ১০০ জনে। সর্বশেষ ধাপে এই সংখ্যাকে ৫০ করা হবে এবং এদেরকে দীর্ঘ ২ বছরের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
বয়সভিত্তিক ‘ক’ গ্রুপে ৯-১১ বছর বয়সী সাঁতারুরা অংশ নেবে। ১২-১৫ বছর বয়সী সাঁতারুরা অংশ নেবে ‘খ’ গ্রুপে। ফ্রি স্টাইল ও নিজের পছন্দের কোনও ইভেন্টে সাঁতারে অংশ নিতে পারবে প্রতিযোগীরা।
এই ট্যালেন্ট হান্ট নারী সাঁতারুদের সংকট দূর করবে বলেও আশা রাখছেন সাধারণ সম্পাদক। এছাড়াও এই কর্মসূচিতে নারী সাঁতারু তুলে আনার ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দিবেন বলেও আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, নদীমাতৃক দেশে নারী সাঁতারুর সংকট আসলেই দুঃখজনক। তাই এবার ট্যালেন্ট হান্টে আমরা বিশেষভাবে নারী সাঁতারুদের তুলে আনার চেষ্টা করছি। “
এসএ গেমসে সোনাজয়ী সাঁতারু শাহজাহান আলী রনি, মাহফুজা খাতুন শিলা, জুয়েল আহমেদসহ ফেডারেশনের কোচেরা এই বাছাই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকবেন।
বাছাই কার্যক্রমের বিস্তারিত জানাতে আজ বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন অডিটোরিয়ামে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। উপস্থিত ছিলেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শাহীন, পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান প্রাইম ব্যাংকের হেড অব ব্র্যান্ড অ্যান্ড কমিউনিকেশন সৈয়দ রায়হান তারেক, ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক নিবেদিতা দাস ও কোষাধ্যক্ষ মেজর মোহাম্মদ আতিকুর রহমান (অব.)।
কর্মসূচী নিয়ে দারুণ আশাবাদী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মাহবুবুর রহমান শাহীন। তিনি জানান, ফেডারেশনের সভাপতি ও বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসানের সার্বিক দিক নির্দেশনা ও প্রাইম ব্যাংকের সহযোগিতায় বিশাল এই প্রকল্প হাতে নেয়া সম্ভব হয়েছে। আশা প্রকাশ করে সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এই ট্যালেন্ট হান্টের মাধ্যমে আমাদের সাঁতারে যে ক্রাইসিস চলছে সেই সময়টুকু থেকে আমরা বের হয়ে আসতে পারব।”
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের সন্তানদের সাঁতারে আসতে উদ্বুদ্ধ করেছেন, ‘আমি দেশবাসীকে অনুরোধ করব যে আপনারা আপনাদের সন্তানদের ঘরে বসিয়ে না রেখে সাঁতারে নিয়ে আসুন। মাদকের যে ভয়াল থাবা থেকে সুরক্ষা দিতে খেলাধুলার বিকল্প নেই। আমি প্রত্যেক পরিবারের সদস্যদের বলব আপনার সন্তানকে সাঁতারে দেন এবং সুন্দর ভবিষ্যত গড়ে তুলুন।’
‘অতীতে ট্যালেন্ট হান্টের নামে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিকেএসপি’র শিক্ষার্থীদের নির্বাচিত করা হয়েছে এবং তাদের নিয়েই দীর্ঘমেয়াদী ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়েছে, এবারও তার পুনরাবৃত্তি হবে কিনা? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে শাহীন বলেন, আগের কমিটির নেতিবাচক কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনার বদলে ইতিবাচক কাজ দিয়েই তিনি এগিয়ে যেতে চান। এবারের আয়োজনের মূল লক্ষ্যই হলো তৃণমূলের সুবিধাবঞ্চিত ও সম্ভাবনাময় সাঁতারুদের খুঁজে বের করা।
‘সেরা সাঁতারুর খোঁজে বাংলাদেশ’ কর্মসূচীর জন্য বাজেট ধরা হয়েছে ৬ কোটি। এরই মধ্যে প্রাইম ব্যাংক পিএলসি ৫০ লাখ টাকা দিয়েছে সাঁতার ফেডারেশনকে। প্রাইম ব্যাংক থেকে আরও সহযোগিতা পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক।