সাফজয়ী নারী ফুটবলারদের বরণ করলেন প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করেছে সাফজয়ী নারী ফুটবল দল। আজ (শনিবার) ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ট্রফি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে যান টানা দ্বিতীয় নারী সাফের শিরোপাজয়ী অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। গত ৩০ অক্টোবর রাতে কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ জেতায় নারী দলকে সংবর্ধনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

এসময় নারী ফুটবলাররা তাদের স্বপ্ন এবং তাদের দৈনন্দিন সংগ্রামের কথা প্রধান উপদেষ্টাকে জানান।

প্রধান উপদেষ্টা বিজয়ী খেলোয়াড়দের দাবিগুলো মনোযোগ সহকারে শুনেছেন এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমস্যাগুলো সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এই সাফল্য অর্জনের জন্য আমি সমগ্র জাতির পক্ষ থেকে তোমাদের অভিনন্দন জানাই। জাতি তোমাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আমাদের দেশের মানুষ সাফল্য চায়। তোমরা আমাদের সাফল্য এনে দিয়েছো।’

ক্যাপ্টেন সাবিনা খাতুন সংবর্ধনার জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান। আয়োজনে যোগ দিতে পেরে তারা সম্মানিত বোধ করেছেন বলে উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, ‘অনেক বাধা অতিক্রম করে আমরা এই পর্যায়ে এসেছি। শুধু নারী ফুটবল দলই নয়, বাংলাদেশের সব নারীকেই অনেক সংগ্রামের মুখোমুখি হয়।’

সাবিনা খাতুন ২০০৯ সালে ফুটবলার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলাপকালে ফুটবলকে ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নেওয়ার জন্য পূর্ব প্রজন্মের ফুটবলাররা তাকে সাহস জুগিয়েছেন উল্লেখ করে সিনিয়র নারী ফুটবলারদের অবদানের কথা স্মরণ করেন তিনি।

সাবিনা বলেন, নারী ফুটবল দলের মধ্যে অনেকেই দরিদ্র পরিবার থেকে এসেছেন; অনেকের পরিবার তাদের ওপর নির্ভরশীল।

‘আমাদের বেতন দিয়ে পরিবারের জন্য আমরা তেমন কিছু করতে পারি না। কারণ আমাদের বেতন তেমন ভালো নয়,’ বলেন তিনি।

মারিয়া মান্দার মতো তার সতীর্থদের সংগ্রামের বর্ণনা দেওয়ার সময় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন সাবিনা।

তিনি বলেন, ‘সাফ-জয়ী দলের ছয়জন খেলোয়াড় ময়মনসিংহের বিখ্যাত কলসিন্দুর গ্রাম থেকে এসেছে। মারিয়া তাদের মধ্যে একজন। অল্প বয়সে বাবাকে হারিয়েছেন। পরিবারের দায়িত্ব তিনিই পালন করেন।’

কৃষ্ণা রানী সরকার ঢাকায় তাদের আবাসন সমস্যার কথা তুলে ধরেন। মনিকা চাকমা খাগড়াছড়ি জেলার প্রত্যন্ত উপজেলা লক্ষ্মীছড়ি থেকে জাতীয় ফুটবলার দলে আসা পর্যন্ত তাকে যে কঠিন সংগ্রাম করতে হয়েছে সেসব কথা বর্ণনা করেন।

মিডফিল্ডার স্বপ্না রানী দিনাজপুরে তার জন্মস্থান রাণীশংকৈল গ্রামের দুর্বল অবকাঠামোর বর্ণনা দিয়েছেন।

উইঙ্গার কৃষ্ণা প্রধান উপদেষ্টাকে এশিয়ার বাইরে তাদের জন্য একটি প্রীতি ম্যাচের ব্যবস্থা করার অনুরোধ করেন; বিশেষ করে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স লিগ বিজয়ী বার্সেলোনার বিরুদ্ধে একটি প্রীতি ম্যাচ ব্যবস্থা করে দেওয়ার অনুরোধ জানান।

প্রধান উপদেষ্টা প্রতিটি খেলোয়াড়কে তাদের ব্যক্তিগত আশা এবং আকাঙ্ক্ষা, সংগ্রাম এবং দাবিগুলো আলাদা কাগজে লিখে সেগুলো তার কার্যালয়ে পাঠিয়ে দিতে বলেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘তোমরা যা খুশি লিখতে পারো, কোনো দ্বিধা করবে না। আমরা তোমাদের দাবি পূরণ করার চেষ্টা করব। এখন যদি কিছু সুরাহা করা যায় তবে আমরা এখনই সেটা করব।’

এসময় উপস্থিত ছিলেন কোচ পিটার বাটলার ও ম্যানেজার মাহমুদা আক্তার।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায়, স্বাস্থ্য ও প‌রিবার কল্যাণ উপ‌দেষ্টা নূরজাহান বেগমসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

Exit mobile version