এশিয়ান আরচ্যারী
তীর এশিয়ান আরচ্যারী চ্যাম্পিয়নশিপস-২০২৫-এর তৃতীয় দিনের খেলায় বাংলাদেশের অন্যান্য আর্চাররা বিদায় নিলেও টিকে আছেন কুলসুম। জাতীয় স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) সকালের সেশনে বাংলাদেশের স্বপ্ন কুলসুম আক্তার মনিকে ঘিরে। কম্পাউন্ড নারী এককের সেমি-ফাইনালে উঠেছেন ঠাকুরগাঁও থেকে উঠে আসা এই আর্চার।
আর্চারি নামের খেলাটি সম্পর্কে কিছুই জানত না কুলসুম আক্তার মনি। অথচ মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে সেই কুলসুম আজ এশিয়ার সেরা প্রতিযোগিতামূলক মঞ্চে বাংলাদেশের পদক প্রত্যাশার প্রতীক।

ঠাকুরগাঁওয়ের সালন্দর এলাকার এই মেয়েটি ২০২৩ সালে বিকেএসপিতে ভর্তি হয়। ধনুক ছোঁয়া পর্যন্ত হয়নি আগে কখনো। কিন্তু প্রথমবার হাতেই মনে হলো—এটাই তার পথ। “আমার স্কুলের স্যার চেষ্টা করতে বলেছিলেন। একদিন ধনুক ধরতেই আগ্রহ জন্মায়। মনে হলো নতুন কিছু শিখছি, চ্যালেঞ্জও আছে,” হাসিমুখে বলল কুলসুম।
কম্পাউন্ড ইভেন্টেই তার পথচলা শুরু। প্রথমদিকে স্কোর মোটেও আশানুরূপ ছিল না। কিন্তু হাল ছাড়েনি কিশোরী। অদম্য পরিশ্রমের ফল ২০২৪ সালের জুনিয়র ন্যাশনালে স্বর্ণ। আর সেই সাফল্যই বদলে দিলো তার আত্মবিশ্বাস।
এখন সে এশিয়ান আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৫-এ বাংলাদেশের শেষ প্রতিনিধি, থাইল্যান্ডের ব্যাংককে সেমিফাইনাল পর্যন্ত পা রেখে। ইরান, ভারত ও কাজাখস্তানের প্রতিদ্বন্দ্বীদের হারিয়ে এগিয়ে গেছে নিজের দৃঢ়তা আর মনোযোগের জোরে।
“আমি পদক নিয়ে ভাবি না। শুধু চাই দেশের জন্য সেরা পারফরম্যান্স দিতে। সবকিছু আল্লাহর উপর নির্ভর,” বলল বিকেএসপির দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী কুলসুম।
চায়ের দোকান চালিয়ে সংসার চালান কুলসুমের বাবা মোহাম্মদ ওসমান গণি। শুরু থেকেই মেয়ের পাশে ছিলেন তিনি। আর যে মা শুরুতে দ্বিধায় ছিলেন, এখন তিনিই সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা।
“বাবা সবসময় বলতেন—তুই পারবি। সেই কথাই আমাকে সাহস দেয়,” জানালো কুলসুম।
আগামী দিনের স্বপ্ন অনেক বড়—অলিম্পিকে বাংলাদেশের পতাকা হাতে মাঠে নামা।
“অলিম্পিক নিয়ে প্রত্যেক অ্যাথলেটের স্বপ্ন থাকে। আমারও আছে। একদিন যেন লাল-সবুজকে সবার সামনে উঁচুতে তুলতে পারি,” আশা তার কণ্ঠে।
কুলসুম জানে—স্বপ্ন পূরণ সহজ নয়। কিন্তু আর্চারি তাকে দিক দেখিয়েছে।
“আর্চারি না পেলে হয়তো আমি পথই খুঁজে পেতাম না। এখন আমার লক্ষ্য আছে, স্বপ্ন আছে—দেশকে গর্বিত করা,” দৃঢ় কণ্ঠে বলল এই উঠতি তারকা।
স্কোর কার্ড
বিশ্বকাপ ২০২৩




















