দেশের ক্রীড়াঙ্গনে এখন সবচেয়ে আলোচিত নাম জিনাত ফেরদৌস। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এই বক্সার প্রথমবারের মতো জাতীয় বক্সিং প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বাজিমাত করলেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে পল্টনের মোহাম্মদ আলী বক্সিং স্টেডিয়ামে ৫২ কেজি ওজন শ্রেণির ফাইনালে প্রতিপক্ষ আফরা খন্দকারকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নের মুকুট তুলে নেন জিনাত।
তাঁর আগমন নিয়েই আগ্রহ ছিল তুঙ্গে। সেই আগ্রহ ফাইনালে রূপ নেয় উত্তেজনায়। শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ছিলেন জিনাত। পাঞ্চে ছিল গতি, রক্ষণে ছিল আত্মবিশ্বাস। অন্যদিকে আফরা চেষ্টা করেছেন ঠাণ্ডা মাথায় লড়াইয়ে টিকে থাকতে। মাঝেমধ্যে কিছু পাল্টা ঘুষি দিয়ে প্রতিপক্ষকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছেনও।
তবে শেষ পর্যন্ত জিনাতের অভিজ্ঞতা ও ধারাবাহিক আক্রমণের সামনে টিকতে পারেননি আফরা। তাঁর সাহসী লড়াই ছিল প্রশংসনীয়। খেলা শেষে আফরা বলেন, ‘তিনি একজন ভালো খেলোয়াড়। তাঁর বিপক্ষে খেলা আমার জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে তাঁর আক্রমণাত্মক স্কিলটা দুর্দান্ত। ম্যাচ শেষে তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, গুড ফাইট।’
গ্যালারিতে বসেই ছোট বোনকে উৎসাহ দিয়েছেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক ও আফরার বড় বোন আফঈদা খন্দকার। সঙ্গে ছিলেন তাঁদের মা–বাবাও। তবে পরিবারের সবটুকু সমর্থনও জিনাতের আত্মবিশ্বাসী পারফরম্যান্সের বিরুদ্ধে কাজে আসেনি।
ম্যাচ শেষে জিনাত বলেন, ‘আমি সবাইকে বলতে চাই, বাংলাদেশের ছেলে-মেয়েরা খেলতে চায়। তারা যদি সুযোগ-সুবিধা পায়, অনেক ভালো করবে। ওদের স্কিল আছে।’
সেমিফাইনালের প্রতিপক্ষ আছিয়া না ফাইনালের আফরা—কার বিপক্ষে লড়াইটা কঠিন ছিল? এমন প্রশ্নে জিনাত বলেন, ‘আমি আমার খেলাটা খেলেছি এবং জিতেছি। দুজনই আলাদা ধাঁচের প্রতিপক্ষ।’
এই চ্যাম্পিয়ন বক্সারের চোখ এখন আন্তর্জাতিক মঞ্চে। আগামী এশিয়ান গেমসে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেলে কি পদক জেতা সম্ভব? জিনাতের সংক্ষিপ্ত উত্তর, ‘ইনশা আল্লাহ।’
তবে ফাইনালের আগে বক্সিং রিংয়ে দেখা যায় এক অনাকাঙ্ক্ষিত দৃশ্য। আনসারের বক্সার জাহিদুল হক রেফারির সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট হয়ে রিংয়ের মাঝখানে বসে প্রতিবাদ জানান। তাঁর কপালে আঘাত লাগায় তিনি চিকিৎসা নেন এবং রায় প্রত্যাখ্যান করেন। এই ঘটনার জেরে বাংলাদেশ আনসার দল প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর হুমকি দেয়। তবে পরে তারা প্রতিযোগিতায় ফিরে আসে।
এ প্রসঙ্গে বক্সিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুস কুদ্দুস বলেন, ‘ফাইটে হারলে যা হয়। হারলেই বলে অন্যায় হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত রিংয়ে ফিরে এসেছে, খেলেছে, এটা ভালো।’
এই উত্তেজনার মধ্যেও বিশেষ গুরুত্ব পায় জিনাত-আফরা ফাইনাল। যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের প্রতিনিধিরা গ্যালারিতে উপস্থিত থেকে জিনাতকে শুভেচ্ছা জানান এবং উপহারও দেন। দেশি সংবাদমাধ্যমের বিপুল উপস্থিতিতে ম্যাচটি হয়ে ওঠে এক ব্যতিক্রমী আয়োজন।
