নারী বক্সিংয়ের ইতিহাসে আরো একটি স্মরণীয় রাত। বক্সিং ইতিহাসের পাতায় নিজের নাম আরেকবার খোদাই করলেন আয়ারল্যান্ডের কেটি টেলর। নিউ ইয়র্কের বিখ্যাত ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পুয়ের্তো রিকোর অ্যামান্ডা সেরানোর বিপক্ষে তৃতীয়বারের মতো রিংয়ে নেমে সংখ্যাগরিষ্ঠ সিদ্ধান্তে জয় ছিনিয়ে নিলেন ৩৯ বছর বয়সী এই বক্সিং আইকন।
‘সোল্ড-আউট’ ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনের রাতটিকে বিশেষ করে তুলেছিল একটি কারণে। প্রথমবারের মতো এখানে আয়োজিত হয়েছিল শুধুমাত্র নারীদের নিয়ে পূর্ণাঙ্গ ফাইট কার্ড। আর সেই ঐতিহাসিক রাতেই ফিনিশিং ছক টানলেন কেটি টেলর-সেরানো ট্রিলজির।

দুই বিচারকের স্কোর ছিল ৯৭-৯৩ টেলরের পক্ষে, তৃতীয় জনের স্কোর ৯৫-৯৫। আগের লড়াইগুলোর তুলনায় তুলনামূলকভাবে শান্ত হলেও এই লড়াই ছিল নিখুঁত বক্সিং কৌশলের প্রদর্শনী।
ম্যাচশেষে রিং থেকে কেটি টেলর বলেন, “আমরা তিন তিনবার ইতিহাস গড়েছি। এটি নারীদের জন্য লড়াইয়ের এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।”
লড়াইয়ের শুরু থেকেই বোঝা যাচ্ছিল, আগের দুই বারের মতো একেবারে খোলা ঘুষির লড়াই নয় এটা। শুরুটা ছিল ধীরগতির। উভয়েই সঠিক সময়ের অপেক্ষায় ছিলেন। তৃতীয় রাউন্ডে এসে প্রথমবারের মতো গতির ঝড় তোলেন টেলর।
ষষ্ঠ ও অষ্টম রাউন্ডে কিছুটা ফিরে আসেন সেরানো, তবে তার পাঞ্চের ধার কমে যাচ্ছিল। বিপরীতে, অভিজ্ঞ টেলর বারবারই বুদ্ধিদীপ্ত কাউন্টার দিয়ে পরিস্থিতি নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখেন। শেষ রাউন্ডে আক্রমণাত্মক ছিলেন সেরানো, কিন্তু টেলরের নিখুঁত কাউন্টার পাঞ্চ এবং পজিশনিং তাকে ঠেকিয়ে দেয় বারবার।
ম্যাচ শেষে সেরানোর জানিয়েছেন, ‘ তার কোন কৌশলই কাজে আসেনি”
৩৬ বছর বয়সী অ্যামান্ডা সেরানো এবার আগের দুই ম্যাচের মতো সরাসরি সংঘর্ষ নয়, দূর থেকে খেলার কৌশল বেছে নিয়েছিলেন।
“আমরা চেষ্টা করেছি ভিন্ন কিছু করার—দূর থেকে লড়াই, বুদ্ধিমত্তা দিয়ে খেলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তা যথেষ্ট ছিল না,”—ম্যাচশেষে বললেন সেরানো।
টেলর অবশ্য ছিলেন আত্মবিশ্বাসী এবং স্পষ্টভাষী। “আমি বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে খেলেছি। ওর পাঞ্চগুলো খুব একটা লাগেনি,”—বলেছেন টেলর।
এই জয়ের পর কেটি টেলরের রেকর্ড দাঁড়াল ২৫ জয় এবং মাত্র ১ হার। তবে বয়স, ক্যারিয়ারের পরিসংখ্যান এবং আগেই দুইবার সেরানোর বিপক্ষে জয়ের কথা বিবেচনায় রাখলে প্রশ্ন উঠছে—এটাই কি তবে টেলরের ‘সোয়ান সং’?
ভবিষ্যৎ নিয়ে নিশ্চিত কিছু বলেননি তিনি, তবে জানিয়েছেন কিছু সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
“এখনই কিছু বলবো না। কিছুদিন ভাবার পর সিদ্ধান্ত নেব,”—বলেন আয়ারল্যান্ডের গর্ব।
সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ হিসেবে উঠে আসছে চ্যানটেল ক্যামেরনের নাম, যার বিপক্ষে টেলরের ফলাফল এখন ১-১। তবে সেই সিদ্ধান্ত নিতেও সময় লাগবে। রিংয়ে হয়তো এটাই ছিল কেটি টেলরের শেষ বড় মঞ্চের লড়াই। তবে যে ইতিহাস তিনি গড়লেন—একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে তিনবার জয়, নারীদের নিয়ে পূর্ণাঙ্গ ফাইট কার্ডের নেতৃত্ব, আর ৩৯ বছর বয়সে নিখুঁত বক্সিং শৈলী। এই সবকিছু তাঁকে কিংবদন্তির আসনে বসিয়ে দিয়েছে অবধারিতভাবে।
স্কোর কার্ড
বিশ্বকাপ ২০২৩



















